নিউইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ২৮, ২০২৪, ০৩:২৩ পিএম

নিউইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত

ছবি সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে পুলিশের গুলিতে প্রাণ গেল এক বাংলাদেশি তরুণের। উইন রোজারিও নামে ২২ বছর বয়সি যুবককে ওজন পার্কের নিজ বাসায় ঢুকে গুলি করে পুলিশ। এর পর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ওজন পার্কের ১০৩ স্ট্রিট ও ১০১ এভিনিউয়ে বাড়ি উইন রোজারিওর পরিবারের। ১০ বছর আগে ওই তরুণের পরিবার বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হয়। ওই তরুণ মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন ছিলেন বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সময় বুধবার (২৭ মার্চ) দুপুর পৌনে ২টার দিকে নিউ ইয়র্কের কুইন্সে ওজোন পার্কের নিজ বাড়িতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন উইন।
যুক্তরাষ্ট্রের ফক্স নিউজের প্রতিবেদন বলা হয়েছে, বুধবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে নিউ ইয়র্ক পুলিশ (এনওয়াইপিডি) বলেছে, ওজোন পার্ক পাড়ায় দুপুর ১টা ৪০ মিনিটের দিকে এই ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই ১৯ বছর বয়সী তরুণের মা ৯১১ নম্বরে ফোন করে বলেছিলেন, তার ছেলে মানসিক সংকটে আছে এবং অস্বাভাবিক আচরণ করছে।
তবে নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই তরুণ নিজেই ৯১১ নম্বরে কল করে পুলিশকে বলেন, তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন এবং নিজের মৃত্যুর মাধ্যমে মানসিক রোগের ইতি টানতে চান।
যাই হোক, ফোন কল পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় পুলিশ। পুলিশ অফিসাররা তরুণ উইন রোজারিওকে ‘সাহায্য পেতে’ অস্বাভাবিক আচরণ থেকে সংযত করার চেষ্টা করে, কিন্তু তিনি সংযত হননি।
পুলিশের ভাষ্য, এরপর উইন একটি ড্রয়ার থেকে কাঁচি বের করে পুলিশের দিকে তেড়ে আসেন। এসময় পুলিশ টেজার গান দিয়ে গুলি করে তার শরীরে ইলেকট্রিক শক দিয়ে তাকে অচল করে দেয়। কিন্তু তার মা এসে তার শরীর থেকে টেজার গানের বার্বওয়্যারগুলো ছাড়িয়ে দেন।
সংবাদ সম্মেলনে এনওয়াইপিডি চিফ অব পেট্রোল জন চেল বলেন, “পরিস্থিতি বেশ উত্তেজনাপূর্ণ, বিশৃঙ্খল এবং বিপজ্জনক হয়ে উঠে।” তিনি বলেন, “মা তার ছেলেকে সাহায্য করার জন্য দৌড়ে গিয়েছিলেন এবং তিনি ঘটনাক্রমে ছেলের শরীর থেকে টেজারগুলোকে ছিটকে ফেলেন।”
পুলিশ বলেছে, এরপর ওই তরুণ ফের কাঁচি হাতে তুলে নিয়ে পুলিশ অফিসারদের দিকে তেড়ে আসে। তখন অফিসাররা তাকে গুলি করে।
চেল বলেন, “পরিস্থিতি ছিল বিশৃঙ্খল ও দ্রুত ঘটমান। এজন্য পুলিশকে আত্মরক্ষার্থে গুলি চালাতে হয়েছে।”
আর এই পুরো ঘটনাটি পুলিশ অফিসারদের শরীরে লাগানো ক্যামেরায় রেকর্ড হয়েছে বলেও জানান চেল। যদিও ভিডিওটি তাৎক্ষণিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি।
তবে উইন রোজারিওর মা বলেছেন, তার ছেলে পুলিশের দিকে তেড়ে যায়নি। সে শুধু কাঁচি হাতে নিয়ে বলেছে, ‘ডোন্ট টাচ মি’।
পুলিশের দাবি, নিহত তরুণ মাদকাসক্ত ও মানসিক বিকারগ্রস্ত ছিলেন। তবে এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিহতের বাবা ফ্রান্সিস রোজারিও।
পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ করে তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, তার ছেলে তো মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন ছিল। তাহলে কেন তাকে গুলি করে মারতে হলো?
উইন রোজারিওর পরিবার আরও জানায়, তাদের ছেলে স্কুলের পড়াশোনা শেষে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার সেনাবাহিনীতে যোগদানের প্রক্রিয়াও প্রায় শেষের পথে ছিল। তবে গ্রিন কার্ড পেতে বিলম্বের কারণে তা স্থগিত করা হয়। জীবনে তার বিরুদ্ধে কোনও অপরাধের অভিযোগও ছিল না।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহত তরুণের ভাই উশতো রোজারিও (১৭) এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এবং পুলিশ ঘটনার যে বিবরণ দিয়েছে তিনি তার বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেন, তার মা তার ভাইকে আটকাচ্ছিলেন।
উশতো রোজারিও বলেন, “আমার মা যখন তাকে জড়িয়ে ধরেছিলেন, তখন পুলিশ তাকে টেজার দিয়ে গুলি করে। টেজার দিয়ে গুলি করার পরও আমার ভাই নিচে পড়ে যায়নি। তাই একজন পুলিশ বন্দুক বের করে তাকে গুলি করে এবং সেসময়ও আমার মা তাকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। তাকে ছয়বার গুলি করা হয়। মা এনকাউন্টারের পুরো সময়জুড়ে ভাইকে কোলে ধরে রেখেছিলেন।”
উশতো রোজারিও জোর দিয়ে বলেছেন, পুলিশ অফিসারদের এভাবে গুলি করার কোনও দরকার ছিল না। তিনি বলেন, “আমি মনে করি না ছোট একটি কাঁচি দুজন পুলিশ অফিসারের জন্য হুমকি ছিল।”
উশতো রোজারিও জানান, তার ভাই দুই বছর আগে ওজোন পার্কের জন অ্যাডামস হাই স্কুল থেকে পাস করেছেন এবং সম্প্রতি বিষণ্নতায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। গত বছর স্বল্প সময়ের জন্য তাকে হাসপাতালে ভর্তিও হতে হয়েছিল।

বর্তমান বাংলাদেশ

Link copied!